নরসিংদীর জনপ্রিয় মৌসুমি ফল লটকন এবার পেয়েছে ‘ভৌগোলিক নির্দেশক’ (জিআই) পণ্যের মর্যাদা।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন সুগন্ধায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরীর হাতে জিআই নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। মেধাসম্পদ দিবসের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট শিল্পী, অভিনেত্রী ও সংগীত পরিচালক আরমিন মুসা।
বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে নরসিংদীর লটকন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি পণ্য—মধুপুরের আনারস (৩৩), ভোলার মহিষের দুধের কাঁচাদই (৩৪), মাগুরার হাজরাপুরী লিচু (৩৫), সিরাজগঞ্জের গামছা (৩৬), সিলেটের মনিপুরি শাড়ি (৩৭), মিরপুরের কাতান শাড়ি (৩৮), ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা (৩৯), কুমিল্লার খাদি (৪০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি (৪১), গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা (৪২), সুন্দরবনের মধু (৪৩), শেরপুরের ছানার পায়েস (৪৪), সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি (৪৫), গাজীপুরের কাঁঠাল (৪৬), কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান (৪৭), অষ্টগ্রামের পনির (৪৮), বরিশালের আমড়া (৪৯), কুমারখালীর বেডশিট (৫০), দিনাজপুরের বেদানা লিচু (৫১), মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর (৫২), নওগাঁর নাকফজলি আম (৫৩), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ (৫৪) এবং ঢাকাই ফুটিকার্পাস তুলার বীজ ও গাছ (৫৫)।
নরসিংদীর লটকনের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মানে রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ স্বীকৃতির পেছনে জেলা প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা ছিল। ই-কমার্স ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ইডিসি)-এর সহায়তায় ২৯ আগস্ট ২০২৩ তারিখে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খানের স্বাক্ষরে জিআই নিবন্ধনের জন্য আবেদন (নম্বর: GI-50) জমা দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, ৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে “ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন, ২০১৩” এর ধারা ১২ অনুযায়ী, নরসিংদীর লটকন জিআই জার্নাল-৩১-এ অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ৮ মার্চ ডিপিডিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এর মধ্য দিয়ে এটি বাংলাদেশের ৩২তম নিবন্ধিত জিআই পণ্যে পরিণত হয়।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অর্জন শুধুমাত্র একটি ফলের মানের স্বীকৃতি নয়, বরং এটি নরসিংদীর কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, কৃষকের শ্রম এবং জেলার ঐতিহ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এর ফলে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববাজারেও লটকনের পরিচিতি ও বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জিআই স্বীকৃতি শুধুমাত্র পণ্যের মান নয়, বরং তা একটি অঞ্চলের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও কৃষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে। নরসিংদীর লটকনের এই অর্জন নিঃসন্দেহে জেলার জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক।