নরসিংদীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলার ঘটনায় শহরের শীর্ষ চাঁদাবাজ জেলা মৎসজীবি দলের নেতা ফজলুল রশিদ ওরফে আদর সহ ৭ চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর রবিবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত আদর জেলা মৎস্যজীবি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পুলিশের ভাষ্যমতে ফজলুল রশিদ ওরফে আদর নরসিংদী সিএনজি অটো রিক্সাসহ নৌপথে চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা বিএনপির এক র্শীষ নেতার দোহাই দিয়ে আদর চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে।

এদিকে সড়কে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শামীমের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা আরো ২৫ থেকে ৩০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শহর পুলিশ ফাড়ির এ টি এস আই সোহেল পারভেজ বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় এই মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নরসিংদী শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকার মাহমুদুর রশিদ এর ছেলে ও জেলা মৎসজীবি দলের সহ সাধারণ সম্পাদক ফজলুল রশিদ ওরফে আদর (৪০), শিবপুর দত্তের গাও ভিটি পাড়া গ্রামের শামসুল হক খন্দকার ছেলে শফিকুল ইসলাম সুমন (৪৪), হাজীপুর বিরাজ খায়ের ছেলে কুদরত হাসান রবিন (২৩), তার ভাই মো. রকিব খা (৩০), ব্রাহ্মন্দী এলাকার মো. হুমায়ন কবিরের ছেলে মো. সোহাগ মিয়া (৩৫), বৌয়াকুর এলাকার মো. শওকত মিয়া’র ছেলে মো. তানভীর মিয়া (২২), ও বালিয়া এলাকার শামসুল আলমের ছেলে শান্ত মিয়া (২৩)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার নরসিংদীর অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার শামিম আনোয়ারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল নিয়মিত টহল দিচ্ছিলো। এসময় তারা খবর পান পৌর শহরের আরশিনগর এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছে। এ সময় তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও শক্তির মহড়া দিয়ে অটোরিকশা ও বিভাটেক থেকে চাঁদা তুলতে দেখেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে নরসিংদী জেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসাইন বিদ্যুতের বড় ভাই শহর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীরের নির্দেশে একদল লোক পুলিশের কাজে বাঁধা দেয় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওপর আক্রমণ করে।

তারা অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপারকে কিল, ঘুষি মারা শুরু করেন। পরে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। এতে তিনি সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়ে। ওই সময় পরে সাথে থাকা পুলিশ সদস্যরা অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ সুপার উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে রবিবার নরসিংদী মডেল থানা এলাকা হতে ঘটনায় জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে।

গত কয়েকদিন পূর্বে নরসিংদী সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শামীম জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। এর পর থেকে তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়। তিনি নিজে তা ব্যক্তিগত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। একই সঙ্গে তার ওপর যে কোন সময় হামলার আশঙ্কার কথা জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর নরসিংদী জেলা বিএনপির এক র্শীষ নেতার দোহাই দিয়ে চাঁদাবাজ ফজলুল রশিদ ওরফে আদর শহরের বীরপুর সিএনজি স্ট্যান্ড দখলে নেয়। একই সাথে নরসিংদী পৌর শহরে সিএনজি অটো রিক্সা থেকে চাঁদা উত্তোলন শুরু করেন। একই সাথে সে নদী পথে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। মেঘনা নদীতে চলাচলরত নৌযান থেকে ৫০০ টাকা করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে আসছেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি নৌকার মাঝিদের ওপর হামলা চালিয়ে বালির বলগেই আটকে রাখার অভিযোগও রয়েছে। এর আগে এই আদর নরসিংদী জেলা যুবলীগ নেতা রুজদীর ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি করতো।

নরসিংদী জেলা মৎস্যজীবি দলের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সজল বলেন, জেলা মৎস্যজীবি দলের প্রস্তাবিত কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার নাম আমি প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু কমিটি অনুমোদন না হওয়ায় সে এখনো পদধারী নেতা নয়। সে এটা ব্যবহার করতে পারে না। এ সমস্ত অপকর্ম যারা করবে তারা যে দলেরই হোক আইনের আওতায় আনতে হবে, বিন্দুমাত্র ছাড় যাতে না দেয়া হয়।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে। অপরাধী যেই হউক তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার এখন ভালো আছে।